সুস্থ্য থাকতে প্রতিদিন কি করা উচিত? বয়স ধরে রাখতে যা করনেন
সুস্থ্য থাকতে প্রতিদিন আমাদের কি করা উচিত?
একবিংশ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে জ্ঞান বিজ্ঞানের বদৌলতে অনেক কিছুই আমরা সহজেই জানতে পারি। কিন্তু বাস্তবে তা রূপান্তর করার প্রবণতা দিন দিন কমে চলেছে। নিয়মিত একটু হাঁটা, খালিহাতে একটু ব্যায়াম, রোদে বেরোনোর সময় সানগ্লাস পরা, আমাদের সুস্থতার জন্য এগুলো ভালো। কেউ কেউ জানলেও কিন্তু আমরা অনেকেই এসব মানি না।
কিভাবে শরীর ভালো রাখতে হবে তা অনেকেরই কমবেশি জানা আছে। এমনকি কেউ কেউ প্রয়োজনের থেকে হয়তো বেশীও জানি। কিন্তু জীবন যাপনে তা মানার চেষ্টা করি না বেশিরভাগ সময়। জ্ঞান থাকলেও জ্ঞানের প্রয়োগ দেখা যায় না। ঠিকমত খাওয়া, ঘুমানো, ব্যায়াম করা, নিজেকে সুস্থ রাখতে এসবের বিকল্প নেই। যতটুকু জানি তাই যদি প্রতিদিন মেনে চলি তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে আর সুস্থ থাকাও সম্ভব হবে অনেক ক্ষেত্রে।
সকালের নাস্তা অবশ্যই করতে হবেঃ
অনেকেরই অভ্যাস হলো সকালবেলা তাড়াহুড়ো করে নাস্তা না খেয়ে বের হয়ে যাওয়া। ক্লাসের কিংবা অফিসের তারা যতই থাকুক, শত ব্যস্ততার মধ্যেও সকালবেলা নাস্তা খেয়ে বাসা থেকে বের হওয়া উচিত। সারাদিনের শক্তি সঞ্চয় এর জন্য সকাল বেলা হালকা হলেও পুষ্টিকর, সহজে হজম হয় এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ নাস্তা খেতে হবে। যারা একটু স্থূলকায়, ওজন কমানোর জন্য তারা সকালের নাস্তা একেবারেই খান না, সেটা মোটেও ঠিক নয়। অল্প হলেও খেতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাস্তা খেলে সারাদিন অন্যান্য জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা কমে। এর ফলে ওজন কমাতে সুবিধা হয়।
একটু হলেও ব্যায়াম করুনঃ
আমরা জানি প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম হাঁটাচলা করলে শরীর সুস্থ থাকে। কিন্তু কজনই বা বাস্তবে তা করি? খুব অল্প সংখ্যক মানুষ নিয়মিত ব্যায়াম করেন সকালবেলা। আর কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন যারা মাঝেমধ্যে সকালে ব্যায়াম করে থাকেন, সবসময় করেন না। প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করলে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে। সকালে ব্যায়াম না করার অভ্যাস থাকলে যখনই সময় পাবেন কিছুক্ষণ হাঁটতে হবে। সাঁতার বা যে কোন ব্যায়াম করার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন।
প্রতিদিন বেশি করে পানি পান করতে হবেঃ
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন গরমের সময়, বেশি ঘামলে বা শরীরে পানিশূন্যতা হলে বেশি পানি পান করতে হয়। সাঁতার বা যেকোন ব্যায়ামের পর পর্যাপ্ত পানি বা ফলের রস পান করতে হবে।
খাবার খেয়েই ঘুমোতে যাবেন নাঃ
খাবার খাওয়ার পরপরই বিছানায় শুয়ে পড়া ঠিক নয়। এতে খাবার গলা দিয়ে উঠে আসতে পারে, এর ফলে গলা ও বুক জ্বালা করতে পারে। তাই খাবার খাওয়ার পর কমপক্ষে ১৫ মিনিট পায়চারি করা উচিত। আর রাতে শোওয়ার কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত।
রোদে সানগ্লাস ব্যবহার করুনঃ
যারা রোদে অনেকক্ষণ কাজ করেন বা বাইরে বেশি সময় থাকতে হয়, তাদের রোদ থেকে তকে ও চোখে নানা রকমের সমস্যা হয়। এসব তথ্য আমরা জানি। কিন্তু মানার ক্ষেত্রেই যত সমস্যা। ত্বক ও চোখ ভালো রাখতে ব্যবহার করতে হবে সানস্ক্রিন লোশন ও সানগ্লাস।
রাতে চা বা কফি খাওয়া উচিত নয়ঃ
রাতে চা বা কফি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে ইনসমনিয়া হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য রোগ হতে পারে।
রাত জাগা উচিত নয়ঃ
সব সময় বেশি রাত জাগা ঠিক নয়। রাত জাগা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি জেনেও আমরা রাতের পর রাত জেগে থাকি। রাতে জাগলে সারাদিনে ঘুম পায়, শরীর দুর্বল লাগে। কাজে মন বসানো যায় না। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রকমের রোগ হতে পারে।
ব্রণ হলে খোঁটানো যাবে নাঃ
ব্রণ হলে কখনোই খোঁটানো যাবে না,এটা জানা থাকলেও আমাদের অবাধ্য হাত সেটা মানে না। ব্রণ চুলকালেও তা খোঁটানো যাবেনা। কারণ এতে সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে মুখে দাগ পড়ে। তাই ব্রণ খোঁটানো উচিত নয়। ব্রণ সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়। তা না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ
ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এটি পরিহার করা উচিত। ধূমপায়ীর জন্য একদিনে ধুমপান ছেড়ে দেওয়া খুব একটা সহজ নয়, কিন্তু চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে ধূমপান করা ছেড়ে দিতে পারবেন। এর সাথে অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ
যাদের বয়স চল্লিশের বেশি মধ্যবয়সি, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ সমস্যা, ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এছাড়াও বয়স্কদের কিছু অসুখ হতে পারে যা উপসর্গহীন। তবে এসব অসুখ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।